প্রতিষ্ঠার পর থেকে সব ধরনের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে খুলনার রাজপথে গৌরবোজ্জল ভূমিকা রেখেছে বিএনপি। বিশেষ করে নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন এবং গণঅভ্যুত্থানে খুলনার রাজপথ ছিল বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদল নেতাদের নিয়ন্ত্রণে। দুর্বার সেই আন্দোলনের পর থেকে খুলনার রাজনীতি বিএনপির নিয়ন্ত্রণে ছিল।
আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের মধ্যেও রাজপথ ছাড়েনি বিএনপি নেতাকর্মীরা। এ সময় প্রায় আড়াইশ’ রাজনৈতিক মামলা মাথায় নিয়ে ফেরারি দিন কাটিয়েছেন প্রায় ৬ হাজার নেতাকর্মী। জেলে ছিলেন প্রায় দুই হাজার। গুমের শিকার হয়েনে দু’জন। তারপরও কেন্দ্র ঘোষিত মহাসমাবেশগুলোতে বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো নেতাকর্মীরা হাজির হয়েছেন।
জেষ্ঠ্য নেতাদের কাছ থেকে জানা গেছে, ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর খুলনায় জেলা ও শহর শাখা নামের দুটি ইউনিট ছিল। খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ছিলেন প্রয়াত এম নুরুল ইসলাম দাদু ভাই, সদস্য সচিব কাজী সেকেন্দার আলী ডালিম।
১৯৮০ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি পুনর্গঠন হয়। তখন সভাপতি হন এম নুরুল ইসলাম দাদু ভাই, সাধারণ সম্পাদক হন কাজী সেকেন্দার আলী ডালিম এবং সাংগঠনিক সম্পাদক হন কে এম শফি উদ্দিন।
১৯৮৭ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে পুনরায় সভাপতি হন এম নুরুল ইসলাম দাদু ভাই, সাধারণ সম্পাদক হন কাজী সেকেন্দার আলী ডালিম এবং সাংগঠনিক সম্পাদক হন মনিরুজ্জামান মনি।
১৯৯৩ সালের সম্মেলনে পুনরায় সভাপতি হন এম নুরুল ইসলাম দাদু ভাই, সাধারণ সম্পাদক হন নজরুল ইসলাম মঞ্জু এবং সাংগঠনিক সম্পাদক হন মনিরুজ্জামান মনি।
২০০৫ সালে আলী আজগর লবীকে আহ্বায়ক করে মহানগর বিএনপির কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। অবশ্য ওই কমিটির বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে এম নুরুল ইসলাম দাদু ভাই ও নজরুল ইসলাম মঞ্জু নিজেদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দিয়ে কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন।
২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘরোয়া রাজনীতি চালু করলে আলী আজগর লবী আর রাজনীতিতে ফেরেননি। তখন এম নুরুল ইসলাম দাদু ভাই ও নজরুল ইসলাম মঞ্জুই মহানগর বিএনপিকে এগিয়ে নিয়ে যান।
২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর সম্মেলনে নজরুল ইসলাম মঞ্জু সভাপতি এবং মনিরুজ্জামান মনি সাধারণ সম্পাদক হন। ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর ওই কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে শফিকুল আলম মনাকে আহ্বায়ক এবং শফিকুল আলম তুহিনকে সদস্য সচিব করে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ২০২৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি সম্মেলনে শফিকুল আলম মনা সভাপতি এবং শফিকুল আলম তুহিন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এই কমিটি এখনও বহাল রয়েছে।
অপরদিকে জেলা বিএনপির কমিটির যাত্রা শুরু হয় আমীর আলী জোয়ারদারের হাত ধরে। এরপর আহ্বায়ক হন শেখ আশরাফ হোসেন, পর্যায়ক্রমে সৈয়দ ঈসা, গাজী আবদুল বারী, মাজিদুল ইসলাম, শফিকুল আলম মনা, আমির এজাজ খানের হাত ঘুরে নেতৃত্ব এখন মনিরুজ্জামান মন্টুর হাতে।
দীর্ঘ পথপরিক্রমার স্মৃতিচারণ করে খুলনা মহানগর বিএনপির বর্তমান সভাপতি শফিকুল আলম মনা বলেন, সরাসরি কমিটির নেতৃত্বে না থাকলেও আমাদের পথ দেখিয়েছেন শেখ রাজ্জাক আলী ও শেখ তৈয়েবুর রহমানসহ অসংখ্য অগ্রজ। তাদের ত্যাগের বিনিময়ে বিএনপি আজকের অবস্থানে এসেছে।
খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, খুলনা বিএনপির শহর হিসেবে পরিচিত। দলের দুঃসময়ে খুলনার কর্মীরা দলের পাশে ছিল। ত্যাগী এসব কর্মীদের অনেকেই পরবর্তীতে মূল্যায়িত হননি। তারপরও তারা দল ছেড়ে, রাজপথে ছেড়ে যায়নি। দলের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এই সব কর্মীদের আত্মত্যাগের যথাযথ মূল্যাযন করবেন বলে আমার বিশ্বাস।
খুলনা গেজেট/এনএম